Tuesday, October 23, 2012

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।ডা. এস এ মালেক


১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড

ডা. এস এ মালেক
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল প্রকৃত পক্ষে তাদের অনুগামীরাই এই গ্রেনেড হামলা চালায়দেশ যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ধারায় আগ্রসর হতে না পারে সে কারণেই জাতির জনক যখন দেশ ও জাতির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে যখন সুনির্দিষ্ট আর্থসামাজিক কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তখন তাকে হত্যা করা হয়েছিলহত্যার পর সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবিপক্ষবীরা দেশ শাসন করে দেশকে সত্যিকার অর্থে প্রতিক্রিয়ার ধারায় পরিচালিত করে এমন এক বাস্তবতার সৃষ্টি করে যাতে করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রায় বিলীন হওয়ার উপক্রম হয় সুদীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন
এ কারণেই স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী চক্র যারা '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিলবাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পরও এ স্বাধীনতা মেনে নিতে রাজি হয়নিসেই অপশক্তি বারবার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ছিল তাদের সর্বাত্মকজঙ্গিবাদী চেষ্টাযার মাধ্যমে তারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও দলের অন্য নেতাদের একই সঙ্গে হত্যা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেননির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব ছিল না বলেই দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু যখন সংসদীয় ধারায় দেশ পরিচালনা করছিলেন,স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তখন তারা তাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেঠিক একইভাবে প্রায় একই শক্তি শেখ হাসিনাকে হত্যা করে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ধারায় দেশ পরিচালিত করতে চেয়ে ছিলবেগম জিয়া তো একাধিকবার বলেছিলেন আর একটা ১৫ আগস্ট ঘটাবার কথাতিনি এ কথাও বলেছিলেন শেখ হাসিনার পরিণতি হবে তার পিতার মতোআর যেহেতু গ্রেনেড হামলাটা ঘটে যখন খালেদা জিয়া ক্ষতমাসীন তখন এই হত্যাকা-ের দায় মুক্ত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব কি? বেগম জিয়ার সরকারের সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুফুজ্জামান বাবর ও মুফতি হান্নানের জবানবন্দি অনুযায়ী গ্রেনেড যদি সরবরাহ করে থাকেন এবং ওই হত্যাকা-ের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে থাকেন ও তার বিশিষ্ট বন্ধু হাওয়া ভবন থেকে মূল পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাহলে বেগম জিয়ার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে চিন্তা করা কি অমূলক? প্রশ্ন জাগে কার নির্দেশে ওই হত্যাকা-ের সব আলামত ধ্বংস করা হলো কর্মরত ৩০০ পুলিশ কর্মকর্তার একজনও কিছু জানতে পারল নাতাদের কেউই অভিযুক্ত হলেন নানির্বিঘ্নে হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হলোঅপরদিকে শেখ হাসিনার গাড়ির ওপর গুলিবর্ষণ করা হলো
হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাক্ষণিকভাবে আহত জনগণের ওপর টিআর গ্যাস নিক্ষেপ করা হলোঅ্যাম্বুলেন্স এলেও আহতদের দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে উঠাতে বাধা সৃষ্টি করা হলো সর্বাত্মকভাবে হামলাকারীদের নিরাপত্তা বিধান করা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের জেনারেল জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি জারি করে নিরাপত্তা বিধান করেছিলেনআর ২০০৪ সালে বেগম জিয়ার সরকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে গ্রেনেড হামলাকারীদের সূম্পর্ণভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেনতাক্ষণিকভাবে বেগম জিয়ার ঘোষণা ছিল শেখ হাসিনা নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেসরকারের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্যই নাকি এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে জাতীয় সংসদে এই বর্বর হত্যাকা- নিয়ে কোনো আলোচনা তখন সরকারি দল হতে দেয়নি বরং ব্যঙ্গ করে অনেক কথা বলা হয়েছিলপরে সরকার ঘটনার তদন্তের নামে যে প্রহসনী কর্মকা- পরিচালনা করেছিলেনজজ মিয়াকে দিয়ে যে নাটক সাজাবার চেষ্টা করেছিল বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকতে পারলে হয়তো ওই তদন্ত ভিক্তিক একটা প্রহসনিক বিচারও সম্পন্ন হতে পারতোযার মধ্য দিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীদের পরিচয় আজো অজানা রয়ে যেতসৌভাগ্যক্রমে বেগম জিয়া ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে ঘটনা প্রবাহ সে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নিবরং পরে শেখ হাসিনার সরকার সঠিক তদন্ত করে যে মামলা পরিচালনা করছেন তা সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে প্রকৃত অপরাধীরাই সাজা পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই যারা অহরহ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের কথা বলেন তাদের শাসন আমলে এরূপ মানবতাবিরোধী জঘন্য জঙ্গিবাদী তপরতা সংঘটিত হলো কী করে? একটা নির্বাচিত সরকারের আমলে এই ধরনের জঘন্য হত্যাকা- ঘটে যাওয়ার পর সরকার কী করে তার দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেসরকার পরিবর্তিত না হলে এবং পুনরায় সঠিক তদন্ত পরিচালনা করা না গেলে জজ মিয়াই হয়তো ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতেনপ্রকৃত আসামি যারা আজ অভিযুক্ত হয়েছেন তারা নিরাপদ সম্ভ্রান্ত অভিজাত জীবন যাপন করতেনএকমাত্র গণতান্ত্রিক আইনের শাসনে দেশ ফিরে আসায় গ্রেনেড হামলার মতো জঘন্য হামলার বিচার হতে চলেছে১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের বিচার ইনডেমনিটি আধ্যদেশ থাকলেও তা বাতিল করে শেখ হাসিনার কারণে দেরিতে হলেও এ বিচার সম্পন্ন হয়েছেএখন গ্রেনেড হামলার বিচারও হবে বলে জাতি আশা করতে পারে বিএনপি থেকে এখন দাবি করা হচ্ছে তারা কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা- ও বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ননগ্রেনেড হামলার বিচার সম্পন্ন হলে তাদের দাবি কি ধোপে টিকবেতারা আরো বলছেন কোনো প্রকার জঙ্গি তপরতার সঙ্গে তারা জড়িত নন অথচ এ দেশের মানুষ ভালো করেই জানে দেশের বিভিন্ন জেলায় একদশক ধরে যে সব বোমা হামলা হয়েছে, সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী কর্মকা- চলেছে তাদের সঙ্গে বিএনপির দল ও সরকারের সখ্যভাব কতটুকু? শেখ হাসিনা দু'বার ক্ষমতায় এসেছেনতিনি এখনো ক্ষমতায় আছেনতার মোট ক্ষমতা থাকার সময় প্রায় ৯ বছরএই সময়ের ভিতর বিরোধী দল কি একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ করতে পারবে যেখানে মানবতা আইনের শাসন, তাদের সময়ের মতো বিপন্ন হয়েছেবিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধ এই সময়ে যে ঘটেনি তা নয়কিন্তু সরকার ও সরকারি দল বিরোধী দলকে শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলা করার মতো অপরাধ শেখ হাসিনার সরকার কখনো করতে পারে বলে কেউ কখনো ধারণা করবেন না দেশে আইনের শাসন বিরোধী তপরতা যখন প্রচ- আকার ধারণ করেছে তখন শেখ হাসিনাই ঘটনা প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেনএভাবেই দেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে চলছেস্বাধীনতার স্বপক্ষের দল হিসেবে জাতির জনকের কন্যা হিসেবে তার উপরে যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত তা পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন ডা. এস এ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক

No comments:

Post a Comment