কর্নেল (অবঃ) শওকত আলী
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তিত হয়, সংশোধিত হয়। যখন জাতি প্রয়োজন মনে করে এর পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কাজ করেছি আমি তা বলবো না। সংশোধন আরও হতে পারে ভবিষ্যতে। এভাবেই তো একটি গণতান্ত্রিক সরকার অগ্রসর হয়। এখন সংবিধানের বিধি মোতাবেক, মহাজোট দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন এনেছে। তারাতো বেআইনি কিছু করে নি। এটা রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হতে পারে কিন্তু অসাংবিধানিক কিছুতো করে নি। যেমন আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নি যখন পঞ্চম সংশোধনী আনা হলো। কিন্তু আমরাতো এটাকে ইস্যু করে আন্দোলনে যাই নি। কাজেই সংবিধানের এই পরিবর্তনটাই শেষ কথা নয়। তারা যদি কোন বিষয়ে সংশোধন চায় তাহলে জনমত সৃষ্টি করুক। এমন কি আমরাও মনে করতে পারি, যেমন আমি মনে করি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা উচিত না। কারণ তাতে অন্য ধর্মের লোকদের ছোট করা হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে সব ধর্মের লোকের সমান অধিকার থাকার কথা এবং সেটাই ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কথা। আমরা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ যা চায় তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিৎ।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে একটা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সে সময় আওয়ামী লীগের তথা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিলো ধর্মরিপেক্ষতা। বিএনপি যদি এই চেতনার প্রতি সৎ থাকতো তাহলে তারা বলতে পারতো যে আমরা রাষ্ট্রধর্ম চাই না, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। সেটা কিন্তু তারা বলে না বা সেটাকে তারা ইস্যুও করে না। আর একথা তো সবাই জানেন তারা রাজনীতিকে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছেন তা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্ত তারপরেও আমার দল বলছে আমি তার অংশিদার এবং তাতে ভোটও দিয়েছি সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত নাও হতে পারি কিন্তু তাই বলে আমি সেটা মানবো না তা তো না। তাদের উচিৎ এটা মেনে নেয়া এবং সেটা মেনে নিয়ে জনমত সৃষ্টি করুক। তারা দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনুক যদি মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে।
আমরা যা করেছি তা যদি গ্রহণযোগ্য মনে না হয় তাহলে কীভাবে তাকে গ্রহণযোগ্য করা যায় সে কথা বিরোধী দল বলতে পারে। যেমন পঞ্চম সংশোধনী যে সঠিক হয় নি– এটাতো সবাই স্বীকার করে। কিন্তু তারা তা স্বীকার করে না। এখন যদি জনগন মেনে নেয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। তখন আমরা এটা নিয়ে আন্দোলন করতে যাবো না। আমরা জনগনের রায় মেনে নেব।
কর্নেল (অবঃ) শওকত আলী: জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার।সংবিধান সংশোধন
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর নিজস্ব। bdnews24.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে bdnews24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
-------------------------------------------------------------------------
৮ প্রতিক্রিয়া - “ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ”
“ধরম নিরপেষ্ক্তা” শব্দটি মুক্তি যুদ্ধের সময় সাধারন মানুষের কাচে তেমন পরিচিত ছিল না। আবাহমানকাল থেকে সব ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বাস করে আসছে। বাঙলিরা প্রকৃতিগ্ত্ভাবে অসাম্প্রদায়িক। দুষ্ট রাজনীতিকরা নিজেদের স্বার্থে মানুষের মনে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বিষ ঢুকিয়ে দেয়।
১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান অবৈধভাবে ১৯৭৭ সালে পরিবর্তন করেন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া, যার জন্য ওনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতণা ধ্বংসকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের অনুসারীরা তাদের লেখনিতে প্রায়ই বলেন জিয়া সস্তা জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এটি করেছিলেন অর্থাৎ পরোক্ষভাবে বলে থাকেন বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতণা বিরোধী কারণ জিয়া বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর উপর আস্থা দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন যা মুক্তিযুদ্ধের চেতণা বিরোধী, সহজ কথায় বেঈমান ও ধর্মান্ধ। এখানে ধর্মকে ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা লাভ করা যায় ।
এরশাদের ক্ষেত্রে এই কথাই বলা হয় ৮৬-তে রাষ্ট্র ধর্মের মুলা দিয়ে ৪ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।
আমি যতটুকু জানি নিরপেক্ষ শব্দের অর্থ হলো কোন পক্ষের নই। সুতরাং ধর্ম নিরপেক্ষ শব্দের অর্থ হলো আমি কোন ধর্মের পক্ষে নই।
মাননীয় ডেপুটি স্পিকার, আপনি উদার নৈতিক সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলছেন এমন একটা দেশ ও সমাজে যেখানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারাই প্রতিষ্ঠিত নয়। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারা পৃথিবীর যে সমস্ত দেশে প্রতিষ্ঠিত, সে সমস্ত দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাথে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নিশ্চয় বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য রয়েছে রাজনৈতিক ইতিহাসের মৌলিকত্বে। ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা (কিছুটা পার্থক্যসহ) পৃথিবীর অপরাপর যে সমস্ত দেশে এই পদ্ধতির চর্চ্চা চলছে তারা কিন্তু এই পদ্ধতি, উদারনৈতিক ধারায় আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে নি। এই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার সময় এটা ছিল তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পূর্বে তাদের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা ছিল কঠোর সংগ্রামমূখর, রক্তক্ষয়ী ও হানাহানিময়।
আমাদের ইতিহাস তাদের মত একই রকম হবে না নিশ্চয়, কিন্তু আমরাও কঠোর সংগ্রাম এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম আমাদের মত করে, এখানেও তাদের সাথে আমাদের, যুগের, ক্ষেত্রের, লড়াইয়ের ধরনের বিস্তর পার্থক্য। তাদের সাথে আমাদের সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য (মুলত মৌলিক পার্থক্য), সেটা হচ্ছে তারা তাদের বর্তমান পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা করেছিল সুদুরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী সমেত নিরঙ্কুশভাবে, নির্লিপ্ত আপোষহীনতায় তারা ছিল অবিচল। ভবিষ্যৎ যুগের স্বজাতীয় রাষ্ট্রের মজবুত ভিত্তির প্রয়োজনে তাদেরকে শত্রু মিত্রের ফয়সালা করে ফেলতে হয়েছিল। আমরা সেটা করিনি!
আমরা যদি আমাদের রাষ্ট্র ও শাসন পদ্ধতির ইতিহাস (গবেষণার প্রয়োজন নেই) দেখি, তবে দেখতে পাই সেখানে কোন গণতান্ত্রিকতার ব্যাপার নেই। সেটা গড়েই ওঠে নি, সেই প্রথম থেকেই। একদিকে মতাদর্শিক পরাজিত শত্রুর সাথে আপোষ ও তাদের মুক্তি (কে অথবা কী তার জন্য কতটুকু দ্বায়ী সে প্রশ্নে আমি যাচ্ছি না, আমরা দেখছি তারা মুক্ত হয়েছে এবং এখন পুণরায় প্রতিষ্ঠিত) অন্যদিকে শাসনের সেই পুরোনো পদ্ধতি। অনেক গুরুত্বপুর্ণ বিষয় অমীমাংসিত, অনেক গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন উত্তরবিহীন অথবা অন্যকিছু! দেশপ্রেমিক পরিক্ষিত ত্যাগীরা অবহেলিত, সুযোগ সন্ধানী চাটুকারদের সুযোগ গ্রহন! যুদ্ধবিধস্ত মায়ের বুকে লুটপাটের মহাযজ্ঞ, পাপ অনাচার আরো কতকিছু! ফলস্বরুপ গণবিচ্ছিন্নতা। আমরা দেখলাম কি উত্তাল গণজোয়ারে বিশাল মহিরুহের মত নোংড়া জঞ্জাল খড় কুটোর মত ভেসে গেল অথচ অল্প কিছুদিনের মাথায় বিশাল মহিরুহের মত ব্যাক্তিত্ব, সমগ্র জাতির মাথার মুকুট সামান্য খড় কুটোর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল! হায়রে দূর্ভাগা বাঙালী এবং বাংলা মা।
মডারেশনের ডান্ডা মেরে বক্তব্যের ঠ্যাংটাই তো ভেঙে দেয়া হল। তাও ভাল, খবর বাসি হয়ে যাওয়ার পর ন্যাড়া অবস্থায় আমার মন্তব্য প্রকাশ করা হ’ল। দেশের অন্য পত্রিকাগুলোতো এটুকুও করে না। আমরা অন্য পত্রিকাগুলোর ছায়াও বিডিনিউজের উপর দেখতে চাই না। কবে যে আমরা দেশে একটা মুক্ত মঞ্চ পাবো!
আমি জনাব ডেপুটি স্পিকারের মানষিকতার সাথে ঘনিষ্টভাবে পরিচিত। বক্তব্যের যে অংশ বাদ দেয়া হয়েছে, আমার মনে হয় না সেটা উনার কাছে আপত্তিকর কিছু ছিল। তা ছাড়া আমি যেভাবে বলেছি, তার চেয়েও খোলাখুলিভাবে এখন বিভিন্নভাবে নানা মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।
আর একটা কথা, বিডিনিউজকে কিভাবে তৃণমূলের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা ভেবে দেখা জরুরী হয়ে পড়েছে। তৃণমূল জনতার শত্রু পক্ষ কিন্তু অনেক বিনিয়োগের মাধ্যমে সেই কাজটা করে চলেছে।
No comments:
Post a Comment